বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে মহাখালী কাঁচাবাজারে যান বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম। ২৮০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনে বেগুন কিনতে যান। দাম শুনে তো অবাক তিনি, বিক্রেতা প্রতি কেজি বেগুনের দাম হাঁকছেন ১০০ টাকা!
রবিউল ইসলাম বলেন, খবরে দেখেছি রোজা আসলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সবকিছুর দাম কমে। আমাদের দেশে এর উল্টোটা হয়। যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম ২৮০ টাকা কেজিতে কিনলাম ব্রয়লার মুরগি। বেগুন কিনতে গিয়ে শুনি এর দামও ১০০ টাকায় ঠেকেছে। রমজান আসলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেন সবকিছুর দাম। প্রতি বছর রোজায় বেগুনের সর্বোচ্চ দাম হয়। ১০০ টাকা কেজি, রীতিমত যেন আগুন লেগেছে বেগুনের গায়ে!
সারাদিন রোজা শেষে ইফতারের সময় মানুষ ছোলা-বেগুনির স্বাদ নিতে চান। যুগ যুগ ধরে এমন রেওয়াজ চলে আসছে। রমজানের সময় দোকানগুলোতে ইফতারের পসরায় যেমন শোভা পায় ছোলা-বেগুনি, তেমনি প্রতিটি বাড়িতে ইফতারের আইটেমে থাকে বেগুনি, ছোলাসহ নানা মুখরোচক খাবার। তাই রোজার আগেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ছোলা, বেগুনসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বেগুনের কেজি গিয়ে ঠেকেছে ১০০ টাকায়। রমজানের শুরু থেকে এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে, ছোলার দাম চাওয়া হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। বেসনের দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাল বেগুন, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। সবুজ বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, রমজানের শুরুর দিনগুলোতে বেগুনের দাম বেড়ে ১২০ টাকা হতে পারে।
ছোলা প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া ভালো মানের বেসন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। তবে, মানের দিক থেকে কিছুটা খারাপ এমন বেসন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। যদিও এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে। গত মাসে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। গত বছরের এ সময়ে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
তিনি বলেন, ছোলা প্রতি কেজি আজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ৮৫ টাকা। এক মাস আগে এটি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। যদিও গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। সে হিসাবে এক বছরে প্রতি কেজি ছোলার দাম বেড়েছে ১৭.২৪ শতাংশ।
বাজার ঘুরে জানা যায়, আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বেগুনের। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিবুর রহমানও বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, হঠাৎ বেগুনের দাম বাড়তি। দুই দিন আগে যে বেগুন বিক্রি করেছি ৬০ টাকায়, আজ সেই বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। দু-এক দিনের মধ্যে বলতে গেলে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। আসলে আমাদের কোনো দোষ নেই, আমরা দাম বাড়াইনি। সব পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) বেগুন কেনা পড়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। সেই বেগুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলে পোষাবে না। রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ১২০ টাকা হয়ে যেতে পারে। পাইকারি বাজারে আমরা যখন যে দামে পণ্য কিনতে পারি, সেই দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, সবধরনের ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। রমজান আসলে সারাদেশে বেগুনের চাহিদা বাড়ে। চাহিদার তুলনায় মাল কম আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। কাঁচামাল নিয়ে খুব বেশি নয়-ছয় করার সুযোগ থাকে না।
‘কারওয়ান বাজারে তিন ধাপে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মাল বিক্রি হয়। গতকাল মাঝরাতে যেসব খুচরা ব্যবসায়ী বেগুন কিনেছেন, তারা প্রতি পাল্লা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় পেয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৮০ টাকার ওপরে কেনা পড়েছে। তারা ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করবে। আর ভোরে এবং সকালে আরও দুই ধাপে খুচরা বিক্রেতারা বেগুন কিনেছেন। এক্ষেত্রে দাম কিছুটা কম পড়েছে। তারা প্রতি পাল্লা বেগুন কিনেছেন ৩৫০ টাকায়। পরিবহন খরচ, নিজের খরচ, দোকান ও রাস্তা খরচ হিসাব করলে প্রতি কেজি বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি করলে পোষাবে। রমজান শুরুর কয়েক দিন বেগুনের দাম আরও বাড়তে পারে।’
রাজধানীর গুলশান-সংলগ্ন লেকপাড় সবজির বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুস সোবহান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এতটাই অসৎ যে রমজান মাসেও তাদের কোনো ভয় নেই। তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সব মুনাফা মনে হয় রমজান মাসেই তুলে নিতে চান।
‘রমজান শুরু হতে আরও দু-এক দিন বাকি। এরই মধ্যে বেগুনের বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। প্রতি কেজি বেগুন যদি এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে আমাদের ভেবে নিতে হবে যে রমজানের শুরুতে দাম আরও বেড়ে যাবে। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে পণ্যটি কিনবে?’
মিরপুর শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা গার্মেন্টকর্মী হালিমা খাতুন বলেন, রমজান এলেই সবকিছুর দাম বাড়ে। এটা যেন বৈধ করে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্রয়লার মুরগির এত দাম যে কিনতে পারলাম না। সবজির দামও বাড়তি। বেগুন তো নিতেই পারলাম না। সবকিছুর দাম আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
একই বাজারের মুদি-দোকানি সুজন আহমেদ বলেন, আমরা প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি করছি ৯৫ টাকায়। তবে, অন্যান্য দোকানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ছোলার দাম আগেও এমন ছিল। রমজান উপলক্ষ্যে খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের চেয়ে এবার দাম সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা বাড়তে পারে।
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.