শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

ডিএসই এটিবি প্লাটফর্মে রেনাটা পিএলসি কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেফারেন্স শেয়ারের শুরু

ডিএসই এটিবি প্লাটফর্মে রেনাটা পিএলসি কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেফারেন্স শেয়ারের শুরু

আজকের পুঁজিবাজার:১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর ১২ ঘটিকায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) প্রথমবারের মতো রেনাটা পিএলসি কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেফারেন্স শেয়ারের আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়৷ এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং রেনাটা পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির।
এ উপলক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও রেনাটা পিএলসি’র মধ্যে তালিকাভুক্তিকরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি ডিএসই’র ট্রেনিং একাডেমী, নিকুঞ্জে স্বাক্ষরিত হয়। ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস এবং রেনাটা পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রেনাটা পিএলসি’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোস্তফা আলিম আওলাদ, কোম্পানি সেক্রেটারী মোঃ জুবায়ের আলম, ইস্যু ম্যানেজার সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ সোহেল হক।

এর আগে ওটিসি মার্কেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ-এর সঞ্চালনায় ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস বলেন, রেনাটা পিএলসি’র প্রেফারেন্স শেয়ার তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে একটি নতুন প্রোডাক্টে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ উদ্যোগের জন্য তিনি রেনাটা পিএলসি কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রথম প্রেফারেন্স শেয়ারকে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে ডিএসই’র অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ার এমন একটি সিকিউরিটিজ যেখানে ইক্যুইটি ও ডেট-উভয় সিকিউরিটিজের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় একে হাইব্রিড সিকিউরিটিজ বলা হয়। ডিএসই’র অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড গঠনের ফলে সাধারণ শেয়ারের বাইরে এ ধরনের হাইব্রিড ইন্সট্রুমেন্ট তালিকাভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

তিনি জানান, রেনাটা তাদের লেভারেজ রেশিও বজায় রাখার লক্ষ্যে কৌশলগতভাবে এই হাইব্রিড ইন্সট্রুমেন্ট ইস্যু করেছে, যার মাধ্যমে কোম্পানি ইক্যুইটি ও ডেটের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ার তালিকাভুক্তির এই দৃষ্টান্ত অন্যান্য ইস্যুয়ার কোম্পানিকেও প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুঁজি উত্তোলনে উত্সাহিত করবে। এর ফলে ইস্যুয়ার ও বিনিয়োগকারী উভয়ই উপকৃত হবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রেনাটা পিএলসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর পেছনে একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রক্রিয়া কাজ করে, যা মোটেও সহজ নয়। রেনাটার ক্ষেত্রে মুদ্রার আকস্মিক ও বড় ধরনের অবমূল্যায়নের ফলে কোম্পানির পরিকল্পিত বিনিয়োগ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। যেখানে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকায়, যা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত।

তিনি জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই অবমূল্যায়ন ঘটায় রেনাটাকে বাধ্য হয়ে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়, যদিও প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যত ঋণমুক্ত অবস্থায় ছিল। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রেনাটা সচেতনভাবে একটি বিকল্প অর্থায়ন কাঠামোর সিদ্ধান্ত নেয়। রাইট শেয়ার ইস্যু করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডারের মালিকানা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেত বিধায় প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুকে উপযুক্ত সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, প্রেফারেন্স শেয়ার ভোটাধিকারবিহীন এবং এতে অংশগ্রহণ সত্ত্বেও মালিকানায় বড় ধরনের ডাইলিউশন ঘটে না।

সৈয়দ এস কায়সার কবির আরও বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ারের লভ্যাংশ হার ট্রেজারি বন্ডের রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। তবে এটি একটি নতুন ধরনের আর্থিক উপকরণ হওয়ায় এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রায় নয় মাস সময় লেগেছে। এ সময়ের মধ্যে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার কমে গেলেও প্রেফারেন্স শেয়ারের কার্যকর রিটার্ন প্রায় ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়েছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে রেনাটার আর্থিক অবস্থান দৃশ্যমানভাবে উন্নত হবে। একসময় রেনাটার পরিচয় ছিল ঋণমুক্ত অবস্থান ও শক্তিশালী নেট মার্জিন, এবং সেই অবস্থানে ফিরে যাওয়ার পূর্বশর্তই ছিল ঋণের চাপ কমানো।

তিনি বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ার মূলত ঝুঁকি ভাগাভাগির একটি কার্যকর উপায়—লাভ না হলে লভ্যাংশ প্রদানের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। ক্যাপিটাল মার্কেটে তাই আইপিও বা রাইট শেয়ারই একমাত্র অর্থায়নের পথ হতে পারে না। মূলধন কাঠামোকে বৈচিত্র্যময় করতে বিকল্প ও উদ্ভাবনী আর্থিক উপকরণ থাকা জরুরি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরও ইনোভেটিভ ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট বাজারে আসবে, যা কোম্পানিগুলোর সুস্থ ও টেকসই ব্যালেন্স শীট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনো প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত আস্থাভিত্তিক ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক সম্পর্ক পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। তবে বিদ্যমান সংস্কৃতি ভেঙে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, রেনাটা পিএলসি’র প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ কমপ্লায়েন্স ইতিহাস, শক্তিশালী করপোরেট গভর্নেন্স এবং সুসংগঠিত শেয়ারহোল্ডিং কাঠামোর কারণে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 ajkerpujibazar.com
Design & Developed by BD IT HOST