আজকের পুঁজিবাজার:দেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)-এর আওতাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন পুঁজিবাজারে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং প্রতিষ্ঠানটির আসন্ন বোর্ড সভায় তালিকাভুক্তির প্রস্তাব তোলা হতে পারে আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মুমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের মত সরকারি কোম্পানিগুলো আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে অথবা বন্ড ইস্যু করে তাদের প্রয়োজনীয় তহবিল পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারে, তাতে করে সরকারের উপর তহবিল যোগানের চাপ কমবে৷ পাশাপাশি কোম্পানিগুলোতে সাধারণ জনগনের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে করপোরেট গভর্নেন্সের উন্নয়ন ঘটবে৷
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার সরকারের প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানিসহ বিপিডিবির আওতাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত করার লক্ষ্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান মুমিনুল ইসলাম এবং বিপিডিবি’র চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো: রেজাউল করিমের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিপিডিবির সদস্য এ এন এম ওবাইদুল্লাহ, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মাদ আসাদুর রহমান, এফসিএস, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাইয়েদ আকরাম উল্লাহ, কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল মনসুর, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদা খাতুন।
বৈঠকে ডিএসইর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের সামগ্রিক অবস্থা এবং ডিএসইর আধুনিকায়নের বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরেন৷ একই সাথে তিনি গ্রীণ চ্যানেল বা ফাস্টর্ ট্র্যাকের মাধ্যমে দ্রুত আইপিও আনার উদ্যোগের বিষয়টিও অবহিত করেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, পাওয়ার সেক্টরের কোম্পানিগুলো গ্রীন বন্ড ইস্যু করে আন্তর্জাতিক ফান্ড ম্যানেজার কোম্পানি থেকেও পঁজিবাজারের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করতে পারে, এতে করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও আমাদের পুঁজিবাজারে আরো বেশী আকৃষ্ট হবে৷
মুমিনুল ইসলাম বলেন, কোম্পানিটির আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী এবং এটি নিয়মিতভাবে লাভজনকভাবে বিদ্যুত উত্পাদন করে যাচ্ছে। ডিএসই এপিএসসিএল-কে তালিকাভুক্তিতে সকল প্রকার প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে সরকারি কোম্পানি ফান্ড সংগ্রহ করতে পারলে সরকারের উপরে অর্থনৈতিক চাপ কমে আসবে এবং কোম্পানিগুলোতে সাধারণ জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। বিপিডিবির চেয়ারম্যান ডিএসইর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করেন।
উল্লেখ্য যে, এই উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনার বাস্তবায়নের একটি বড় পদক্ষেপ। তিনি ২০২৫ সালের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ে অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং সরকারি অংশীদারিত্বে পরিচালিত ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার নির্দেশনা দেন।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা ১৩৭ কোটি ২৬ লাখ শেয়ারে বিভক্ত। এর মধ্যে বিপিডিবির মালিকানা রয়েছে ৯১.০১ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ৮.৯৮ শতাংশ।
১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ১ হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করেছে ৭ হাজার ৫৭১ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ, যা আগের বছরের তুলনায় ৯.৩৯ শতাংশ বেশি।
উক্ত অর্থবছরে আশুগঞ্জ পাওয়ার নিট মুনাফা করেছে ৪৮৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের দ্বিগুণ। ইপিএস (শেয়ারপ্রতি আয়) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। ২০২২-২৩ সালে মুনাফা ছিল ২৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭৮ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানির রাজস্ব বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।
২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানির প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ইপিএস ২ টাকা ৩৪ পয়সা। রাজস্ব হয়েছে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
Leave a Reply